bangla choti live golpo. চলছে চৈত্র মাস। আকাশের রঙ বদলাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। সকালের আকাশ দেখলে বিকালের আকাশ কেমন হবে তা আন্দাজ করা যায়না। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। কাল সারারাত অনেক বৃষ্টি ছিলো। সকালটাও ছিলো মেঘলা। অথচ দুপুর হতেই আকাশটা চকচকে হয়ে গেছে। সাথে আছে তার প্রখর রোদ৷ বিকাল হতে যাচ্ছে রোদের তেজ এখনো কমছে না। এই রোদের মধ্যে রাস্তা দিয়ে ছাতা বিহীন গাড়ি বিহীন হেঁটে যাচ্ছে আরান।
মেঘবতী – 1
তাঁর বাইকটা ইরান নিয়েছে। কোথায় নাকি যাবে সে। তাই তাকে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। এই রোদের মধ্যে ঘেমে একদম একাকার হয়ে গেছে। তবুও তাঁর ক্লান্তি লাগছে না। আজ তাঁর মনটা ফুরফুরে। সুপ্তিকে আজ তাঁর মনের কথা জানিয়েছে, হোক সেটা পত্রের মধ্যেই। তবু তো আজ বলেছে মনের কথাটা। আরারের মাথায় প্রশ্ন জাগে,” আচ্ছা সুপ্তি আমায় একসেপ্ট করবে তো?” কিছুক্ষণ ভাবার পরে উত্তর খুঁজে পায়,না করলে ক্ষতি কি?
choti live golpo
আবার প্রপোজ করবো। এভাবে করতে করতে একদিন সুপ্তি হ্যাঁ বলে দিবে। প্রায় একঘন্টা হাঁটার পরে আরার বাসায় পৌঁছে যায়। সাদা রংয়ের দোতলা একটা বিল্ডিং। বাসাটা বেশ সুন্দর। দোতলার বারান্দায় নানা ফুলের টব সাজানো। ফুল তাঁর বাহার দিয়ে বাসাটার সৌন্দর্য দ্বিগুন বারিয়ে দিছে। আরান কলিং বেল টিপলো। কলিং বেল দেওয়া মাত্রই দরজা খুলে দেয় ১১-১২ বছরের একটা মেয়ে।
যেন এতোক্ষণ দরজা খুলার জন্যই বসে ছিল সে। মেয়েটার গায়ের রং আরানের মতোই উজ্জ্বল শ্যামলা। হলুদ রঙের একটা টপস পড়েছে সে। হলুদ রং যেন তাঁর গায়ের রংটা মলিন করে দিছে। আরার তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার মুখটা মলিন। আরান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ভিতরে পা বারিয়ে বলল,”
_কিরে আঞ্জু কালি। তোর আবার কি হলো? মুখটা গোমড়া করে রাখছিস কেন?”
আরানের কথায় মেয়েটা ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিলো। আরান অবাক হয়ে পিছনে থাকায়৷ মেয়েটাকে ধরে গিয়ে সোফায় বসে চোখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো,
_কাঁদিস কেন? আম্মু বকেছে তোকে?
মেয়েটা কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই তিনটা যুবতি মেয়ে দৌড়ে এসে আরানকে ঘিরে ফেলে। একজনের হাতে টাওয়াল। একজনের হাতে পানির গ্লাস। একজনের হাতে একটা হাতপাখা। টাওয়াল হাতে মেয়েটার নাম আশু,এই মেয়েটাও আরানের মতোই শ্যামলা। গ্লাস হাতে মেয়েটার নাম আনু আর পাখা হাতে মেয়েটার নাম আরু। দুজনই জমজ। সুন্দর কাকে বলে এই দুটো মেয়েকে না দেখলে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না।
দুজন একই রকম দেখতে হলেও আরুর চুল শর্ট আর আনুর চুল কোমর পেরিয়ে যায়। তাদের মধ্যে আরেকটা পার্থক্য আছে। আরুর কণ্ঠ হলো ভারি আর আনুর চিকন। আশু হলো আরু ও আনু থেকে দু বছরের বড়। তবে দেখলে মনে হয় একই বছরে এই তিনটা মেয়ের জন্ম হয়েছে৷ আরান আনুর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেতে লাগলো। আশু টাওয়াল নিয়ে আরারের কপালের ঘাম মুছে দেয়। আরু পাখা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে। আরান গ্লাসটা টে টেবিলের উপর রেখে বলল,
_কি ব্যাপার আজ এতো সেবা করা হচ্ছে সিস্টার্স। কোনো প্ল্যান ক্ল্যান চলছে নাকি?
আরানের কথায় আনু আশু আরু বড় চোখ করে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। তারপর সূচক মাথা নেড়ে এক সাথে বলল,
_কোনো প্ল্যান নেই ভাইয়া।” আশু টাওয়াল রেখে আরানের ডান পাশে বসে আহানের হাত টিপে দিতে দিতে বলল,
_তুমি আমাদের চার বোনের একটা মাত্র ভাই। তুমি কি কম আদরের বলো?
আনু আঞ্জুকে তুলে আরানের বাম পাশে বসে আরানের বাম হাত টিপে দিতে দিতে বলল,
_ভাই তুমি কত টায়ার্ড। তোমার মতো টায়ার্ড হলে না আমার খুব ঘুম পায়। তোমারও এখন ঘুমানো উচিত। চলো রুমে চলো।
আরু পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে বলল,
_হ্যাঁ ভাইয়া চলো ঘুমাবে। তোমাকে ভিষণ টায়ার্ড লাগছে। হ্যাঁ না রে আপুনি?
আরান দুহাত এটে সোজা হয়ে বসলো। তারপর একেক বার একেকজনের দিকে তাকালো। আরানের এভাবে তাকানো দেখে তিন বোনের চেহারায় চোরের মতো লোকচুরি ভাব চলে আসে। যেন এই পালালে লুকিয়ে বাঁচবে। আরান সরু চোখে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কাহিনি কি? অন্যদিন তো বাসায় ঢুকা মাত্রই তোরা চকলেটের জন্য আমার পকেট ছিঁড়ে ফেলিস। আজ এতো কদর কেন?
আশু বাঁজ খাই গলায় বলল,”কদর করলে কি হয়? আমরা কি তোকে কদর করিনা।
_কদর করিস কিন্তু তোদের কদরের মাঝে ঘাপলা থাকে। হয় তোরা আমার পকেট মারতে কদর করিস, নয় আমার হয়ে আম্মুর পকেট মারতে কদর করিস।
আনু আরানকে আহ্লাদী গলায় বলল,
_ভাইয়া কারো কদরে যদি কোনো ঘাপলা থাকে, তাহলে সেটা আপুর। আমরা তো সুইট কিউট আর নম্র ভদ্র মেয়ে। হ্যাঁ না রে আরু?
আশু দুহাত কোমরে রেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
_আমার কদরে ঘাপলা আছে?
_নাতো কি। এক ভাইয়াই আছে, যে আমাদের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আর তুমি? নিজের একটা ড্রেসই পড়তে দাওনা।
_বেশ করি। আমি ভাইয়ার মতো হতে পারবো না, ঠিক আছে। তবে আমি তোদের মতো হতে পারি।
আরু ও আনু বেশ আগ্রহ নিয়ে প্রফুল্ল হয়ে বলল” আমাদের মতো কেমন?
আশু মুখ বাঁকিয়ে বলল,
_সারাক্ষণ শুধু খাই খাই খাই।
_আপুউউউউউউ।
আরান বোনদের কান্ড দেখে হেসে উঠলো। তারপর আড়মোড়া ভেঙে বলল,”
_তোরা ঝগড়া কর আমি সুপ্তির মাঝে যাচ্ছি।
_কার মাঝে?
_আরে ঘুমের মাঝে।
সুপ্তি ভ্রু নাচিয়ে বলল,”
_তুমি অন্যটা বলেছো ভাইয়া।
_সুপ্তি মানে ঘুম। মানে আমি ঘুমাতে যাচ্ছি।”
বলেই আরান উঠে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। আশু আনু ও আরু খুশিতে গদগদ করতে করতে তাঁদের ঘরে চলে গেলো। আনজু এতোক্ষণ বসে বসে বোনদের তামশা দেখেছে৷ এখন উঠে গেলো আরানের ঘরের দিকে। আরান ওয়াসরুমে যাচ্ছিলো আনজুর ক্ষীণস্বরে ভাইয়া ডাক শুনে দাঁড়ায়। আনজু রুমে ঢুকে আরানের সামনে দাঁড়ালো। আরান বলল,
_কিছু বলবি কালি?
আঞ্জু দরজার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর বলল,
_ভাইয়া। আপুরা আজ ছাদে উঠে নেচে সেটা ভিডিও করেছে। পাশের ছাদে একটা ছেলেও ছিলো।
_আম্মু কই ছিলো?
_আম্মু স্কুলে ছিলো। আম্মু আসার পর আমি আম্মুকে বলেছি বলে আপুরা আমায় বকা দিয়েছে। আম্মু আপুদের বকেছে আর বলেছে তুমি বাসায় আসলে সব বলে দিবে।
আরানের নাকের ডগা ফুলে উঠলো। সেদিন এতো করে বুঝানোর পরেও আজ তাঁরা ছাদে উঠেছে? তাও ভিডিও বানানো? আরান রাগে বোনদের রুমের দিকে পা বাড়ালো। বড় হয়েছে বলে একটার গায়েও হাত তুলেনা। আজ একদম মেরেই দিবে। কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা ছাদে উঠে নাচানাচি করে। আশেপাশের লোক দেখলে কি বলবে? কই যাবে এই মানসম্মান? আরান রুম থেকে বের হতেই তাঁর ফোন বেজে উঠে। আরান হেঁটে হেঁটে কল রিসিভ করে কর্কশ গলায় বলে,
_হ্যালো কে?
কেউ কথা বলল না। আরান দু তিন বার হ্যালো হ্যালো করে তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রাগান্বিত গলায় বলল,
_ওই মিয়া কথা বলেন না কেন?
_আ আ আপনি লেটার দিছিলেন।”
তৎক্ষণাৎ আরানের পা থেমে গেলো। এতোক্ষণে সে তাঁর বোনদের দরজায় এসে গেছে। তাকিয়ে দেখলো তাঁর বোনরা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে ভিতু চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। ফোনের ওপাশ থেকে সেই মধুর কণ্ঠটা বলে উঠলো,
_শুনতে পাচ্ছেন?” আরান মৃদু হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। তাঁর বোন গুলো অবাক হয়ে একজন আরেজনের দিকে তাকলো। তারপর খুশিতে নেচে উঠলো।
★
আরান রুমে এসে দরজা বন্ধ করে গিয়ে খাটে বসলো। উত্তেজনায় তাঁর হাত পা কাঁপছে। সুপ্তি তাকে কল দিয়েছে? তার মানে সুপ্তি তাকে মেনে নিয়েছে? খুশিতে আরানের ইচ্ছে করছে ডান্স করতে। রুমে আসতে আসতে কল কেটে গেছে।
আরান আবার কল দিতে গিয়ে থেমে গেলো। কেমন জানি একটা অনুভূতি হচ্ছে তাঁর। খুব খুশি খুশি লাগছে। আরান কল দিলো ফারদিনকে। প্রথম রিংয়েই ফারদিন কল রিসিভ করে। আরান আনন্দিত গলায় বলল,
_ফারদিন জানিস সুপ্তি আমায় একসেপ্ট করেছে। ও আমায় কল করেছিলো।
_আচ্ছা ঠিক আছে রাখ।
_রাখবো মানে? আরে ভাই জীবনের প্রথম প্রেম করতে যাচ্ছি। congratulations বল।
_রাখ তোর জীবনের প্রথম প্রেম আমি টয়লেটে আছি।
_টয়লেট মানে? ছিঃ ফারদিন তুই ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে টয়লেট ব্যবহার করিস?
_তুই কোন অভদ্রের বাচ্চারে যে টয়লেট করিস না?
_আরে ছিঃ ছিঃ এটা বলতে চাইনি। আমি বলতে চাইছি তুই ভদ্র ঘরের ছেলে হয়ে টয়লেটে ফোন ব্যবহার করিস?
_তো তুই কেন ভদ্র ঘরের বাচ্চাদের টয়লেটে থাকা অবস্থায় ফোন দিস?
_দ্যাত রাখ ফোন।
_তুই রাখ।
আরান ফোন রেখে দিয়ে কিছুক্ষণ আগে কল আসা নাম্বারটা বের করলো। ইশ নাম্বারটা দেখেই কি প্রশান্তি লাগছে তাঁর। না জানি এই নাম্বারের মানুষটার সাথে কথা বললে কেমন লাগবে। ভয়ার্ত গলার বলা আপনি লেটার দিছিলেন কথাটা বার বার কানে বাজছে আরানের। ভয়েসটা এতো মিষ্টি কেন? আরান ফোন দিলো। দুতিন বার দেওয়ার পরেও কেউ ফোন তুললো না।
★
খাটের উপর দুহাতে পা এটে বসে আছে সুপ্তি। পা বাজ করে কোলে বালিশ নিয়ে বসে আছে জুহা। বালিশে কনুই ঠেকে নোক কামড়াচ্ছে সে। তাঁদের দুজনের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে তর্নি।তাঁর এই অসহায় দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে একটু পর পর তাঁর দিকে তাকাচ্ছে দুজোড়া তীক্ষ্ণ চোখ। তাঁর উপর প্রচন্ড রেগে আছে সুপ্তি ও জুহা। তাঁরা দুজন এক পাহাড় উত্তেজনা নিয়ে বসে আছে আরান কিভাবে কথা বলে তা শুনার জন্য।
আর তর্নি কিনা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে শেষ হয়ে যাচ্ছে? তাও তাঁরা দুজন জোর করে একবার ফোন দেওয়ালো তো এখন আরান ফোন দিচ্ছে সে ফোন ধরছে না। জুহা কোলের বালিশটা টাস করে বিছানায় রেখে বিরক্তি নিয়ে বলল,
_আমি বুঝতে পারছি না এখানে এতো ভয় পাওয়ার কি হলো? সে তো নাম্বার দিয়েছে কথা বলার জন্য তাইনা?
_এটা ঠিক না জুহা। উনি মাত্র একটা লেটার দিলেন আর আমি কিনা চট করে উনাকে কল দিয়ে দিবো?
সুপ্তি রাগে পা এটে রাখা হাত দুটো নাচিয়ে বলল,
_এখন তোকে বস্তা বস্তা লেটার দিতে হবে বুঝি?
_আরে না সেটা বলছি না। আমাদের তো দু একদিন ভাবা উচিত তাইনা?'”
তর্নির কথা শেষ হতেই আবার কল এলো৷ সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
_এখন যদি ফোন না ধরেছিস তোকে লাত্তি দিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিবো।
_দেখ সুপ্তি তুই বাড়াবাড়ি করছিস। এসব ঠিক না।
জুহা বলল,
_দেখ তর্নি আরারকে না জিজু হিসাবে আমাদের বেশ লেগেছে। তাই চাই ঘটনা মুচড় দেওয়ার আগে তুই ঝাপটে ধর। আরে ভাই আজকাল মানুষ রাস্তা ঘাটে প্রেম করে৷ তুই ঘরে বসেও করতে পারবি না?
সুপ্তি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চাপা গলায় বলল,”এই ভুও চুপ চুপ।” বলে সুপ্তি ফোন রিসিভ করে নিলো৷ তর্নিকে ফোনটা দিয়ে ফিসফিস করে বলল,” নে কথা বল।”তর্নি ভিতু চোখে তাকিয়ে দুহাত মাথা এক সাথে নাড়িয়ে না বলল। জুহা ধমকের চোখে তাকালো।
তর্নি কাঁপা হাতে ফোন হাতে নেয়৷ তাঁর বাটনের ছোট ফোনটাও যেন ধরার শক্তি নেই তাঁর। ফোনটা লাউডে দেওয়া আছে। জুহা সুপ্তি একফালি উত্তেজনা নিয়ে বসলো, আরানের মতো মাস্তান ছেলেটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে কিভাবে কথা বলে সেটা দেখতে। তর্নি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
_হ্যা হ্যা হ্যালো।
_হাই মিস,,,,,,,
হাই মেঘবতী।
_কে মেঘবতী?
_তুমি।
_আ আমি?
_হুম তুমি। এক আকাশ মেঘ নিয়ে তুমি আমায় প্রথম দেখা দিয়েছিলে। আর আজ সকালটাও আকাশ ভরা মেঘ ছিলো। তাই তুমি মেঘবতী। আমি তো তোমাকে মেঘবতী বলেই ডাকবো।
আরানের কথায় তর্নির হৃদপিণ্ড চলাচলের গতি বাড়তে লাগলো৷ যেদিন প্রথম তাঁরা তিন বান্দবী ভার্সিটিতে পা রেখেছিলো, সেদিন হঠাৎ করেই আকাশটা মেঘের চাদরে মোড়িয়ে গেছিলো। পুরো আকাশ জুড়ে ছিলো মেঘের খেলা। ভার্সিটির গেট পেরিয়েই তর্নির চোখ আটকে গেছিলো শ্যামবর্ণ এক সুদর্শন যুবকের উপর। যে কালো চশমা চোখে তাকিয়ে ছিলো গেটের দিকে।
সেই প্রথম দেখাতেই তর্নি আরার নামের মানুষটার প্রেমে পড়ে যায়। সেই প্রেমে পড়ার প্রথম অনুভূতি আজও অনুভব করে তর্নি। জুহা আর সুপ্তি মিটিমিটি হাসছে। আরান হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে। লজ্জায় তর্নি কিছু বলতে পারছে না। আচমকা লজ্জা এসে ঘিরে ধরেছে তর্নিকে। আরান বলল,
_মেঘবতী শুনতে পাচ্ছো?
_জ্বি।
_তোমাকে মেঘবতী ডাকার অধিকারটা দিবে তো আমায়?
তর্নি কিছু বলল না৷ আরান বলল,
_তুমি কি আমার এলোমেলো অগোছালো জীবনের সঙ্গী হবে মেঘবতী?
তর্নি ঠোঁট কামড়ে হাসলো৷ জুহা ও সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওরাও হাসছে। তর্নি কি বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। আরান বলল,
_হবে মেঘবতী? তর্নি ছোট করে “হুম” বলল। আরান আনন্দিত গলায় বলল,
_সত্যিইইইই?
আরানের খুশি দেখে হেসে উঠলো তর্নি। আরান স্নিগ্ধ গলায় বলল,
_আচ্ছা মেঘবতী। তোমার এটা মনে হয়না যে আমি খারাপ বা আমার হ্যাবিট গুলো তোমার সাথে যায় না। সবার সাথে আমি রুড বিহেভ করি।
_আপনি মোটেও খারাপ নয় আমি জানি।
_কিভাবে জানো?
_আপনি মেয়েদের অনেক সম্মান করেন। নারীদের সম্মান করার গুনটা শুধু ভালো পুরুষদের মাঝেই থাকে।”
তর্নির কথা জুহা ও সুপ্তি বড় বড় চোখ করে ঠোঁট উল্টে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো৷ দুজনই টিটকারি মেরে ইশারায় মজা উড়ালো৷ আরান বলল,
_আচ্ছা চলো না আমরা ভিডিও কলে কথা বলি।
_আব,,আমার স্মার্ট ফোন নেই।
_তোমার হাতে মনে হয় আমি স্মার্ট ফোনই দেখেছিলাম।
_আসলে আমার ফ্রেন্ডদের ফোন মাঝে মাঝে হাতে নেই।
_অহ। ইটস ওকে, থাক। কাল একবার দেখা করবে?
_কাল?
_হুম।
তর্নি সুপ্তি ও জুহার দিকে তাকালো৷ আজ রাতের ট্রেনে যে যার বাড়িতে রওনা দিবে, সেখানে কাল দেখা করা কি করে সম্ভব? তর্নি বলল,
_আমি তো রাতের ট্রেনে চলে যাবো।
_তাহলে এখন আসো। নয়তো আমি আসি তোমার হোটেলের সামনে?
সুপ্তি ও জুহা দুহাতে না বুঝালো। এখানে আরার আসলে বিরাট সমস্যা হবে। আর এই সময়ে দেখা করাও সম্ভব নয়। তর্নি বলল,
_আমি এখনো লাগেজ গুছাইনি। সব জিনিসপত্র গুছাতে সময় লাগবে। সন্ধ্যা হতে তো বেশিক্ষণ নেই।
_অহ।
_আপনার বাবা মা ভালো আছেন?
_হুম। মা ভালো আছে,বাবা নেই।
_সরি।
আরারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় তর্নি। ফোন রাখার পর তর্নি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। অনুভূতি গুলো হাতুড়ি হয়ে হৃদপিণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই হাতুড়ি পেটানোর ধুকপুক শব্দে তর্নির সবার্ঙ্গ কাঁপছে। কানে লেপ্টে লেগে আছে আরারের মেঘবতী বলা ডাকটা। হঠাৎ সুপ্তি ও জুহা ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। তর্নি চোখ মেলে চেয়ে দেখল জুহা আর সুপ্তি বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে।
তাঁরা যে তর্নিকে নিয়ে হাসছে সেটার কোনো সন্দেহ নেই। আজ ছয় মাস থেকে যাকে নিয়ে ভেবে এসেছে তর্নি তাকেই আজ ভালোবাসা হিসাবে পেয়েছে। তাঁর অনুভূতি গুলো কেমনে দমাবে সে? ফোনটা বিছানায় রাখতেই ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো।
তিন বান্ধবীর তিনটি হাত এসে হামলে পড়লো ফোনের উপর। তর্নি টান দিয়ে ফোন এনে দেখলো আরানের নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। ফোনের ছোট স্ক্রীনের উপর তিন বান্ধবীর চোখ তিনজোড়া চোখ রেখে মেসেজ পড়তে লাগলো,”
“_তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে মেঘবতী। তোমার এলোমেলো চুলগুলো একবার ছুঁয়ে দিতে মনটা ছটফট করছে। জানো, খুব হিংসা হয় যখন দেখি অবাধ্য বাতাস তোমার চুল গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। আর তোমার নির্লজ্জ চুলগুলো লাজ লজ্জা ভুলে তাঁর ছোঁয়া পেয়ে সুখের আকাশে উড়ছে। আমারও তখন ইচ্ছে করে বাতাস হয়ে তোমার মাঝে মিশে যাই। যেন অন্য কেউ আমায় না দেখতে পারে।
শুধু তুমি আমায় অনুভব করো। আর আমি ছুঁয়ে দিয়ে যাই তোর শরীরের প্রতিটি পশম। আমার ছোঁয়া পেয়ে তুমি কেঁপে উঠো ক্ষণে ক্ষণে। আচ্ছা মেঘবতী,তোমার নির্লজ্জ চুলগুলো একবার আমাকে ছুতে দিবে? আমি দেখতে চাই সে কতটা উড়ে আমার ছোঁয়া পেয়ে। তোমার ক্লিপগুলোর মতো একবার তোমার মেঘ কালো চুলো নাক ডুবাতে চাই।
নেশাতুর হতে চাই তোমার চুলের সুগন্ধে। ঘোর লাগা গলায় বলতে চাই,মেঘবতী তুমি অনেক আবেদনময়ী। নির্লজ্জ চুলের অধিকার লজ্জাবতী তুমি তখন আমায় তোমার চুল থেকে ছাড়াতে চাইবে। আর আমি বেহায়া ক্লিপের মতো তোমার দু একটা চুল আঁকড়ে ধরে আটকে থাকতে চাই। দেবে কি আমায় সেই অধিকার মেঘবতী?”
মেসেজটা পড়ে সুপ্তি বুকে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বলল,
_আয় হায় কি রোমান্টিক। আমার তো ইচ্ছে করছে তর্নি হয়ে আমি আরারের সাথে প্রেম করি।
জুহা বলল,
_ইয়ার এটা তো unbelievable। আরারের মতো ছেলে এত্তো কিউট কিউট কথা বলে? সম্পর্কের শুরুতেই এত্ত এত্ত রোমান্টিক কথাবার্তা?”জুহা বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,” হায় রাব্বা। আই ওয়ান্ট এ ভিলেন বয়ফ্রেন্ড।
_জুহা বিশ্বাস কর তোর পঞ্চাশতম ক্রাশের কসম। আরার যদি এখন এসে আমাকে বলে তর্নি বাদ সুপ্তি ডান আমি কিন্তু এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাজি হয়ে যাবো।
তর্নি একটা বালিশ নিয়ে সুপ্তি ও জুহার উপর ছুঁড়ে মারলো। ওরা আবারও ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। তর্নি ওয়াসরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ ঠেকে চোখ বন্ধ করে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিতে লাগলো। প্রথম প্রেমে পড়ার অনুভূতি হলো সর্বনাশা অনুভূতি। এই অনূভুতি একা একা হাসায়৷ লোক সমাজেও এই হাসি চলে আসে। সব কিছু তখন তেঁতু তেঁতু লাগে। আশেপাশের এতো মানুষকে বিরক্ত লাগে।
শুধু ভালোবাসার মানুষটা নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। লজ্জায় তর্নির গাল দুটো লাল হয়ে গেছে। চোখ মেলে থাকাতেও লজ্জা লাগছে তাঁর। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের খোপাটা খুলে দিলো তর্নি। জুহা ও সুপ্তির জোরাজোরিতে বেশ কয়েকদিন চুল ছেড়ে ভার্সিটি গিয়েছে সে।
নয়তো সব সময় বেনি করেই যেতো। আসলেই তর্নি এতো সুন্দর? নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো সে। আরারের মেসেজের কথাগুলো মনে পড়তেই লজ্জা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। হেসে উঠে দুহাতে মুখ ঢেকে ধরলো সে।
★
তর্নিকে মেসেজ দিয়ে কিছুক্ষণ রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা করলো আরান। কোনো রিপ্লাই আসলো না। হয়তো টাকা নাই সুপ্তির ফোনে এটা ভেবে ফোনটা রেখে দিলো আরান। সুপ্তি এভাবে তাকে একসেপ্ট করে নিবে কল্পনাই করেনি সে। ভেবেছিলো অন্য মেয়েদের মতো সুপ্তিও তাকে মাস্তান ছেলে ভেবে ফিরিয়ে দিবে। আরার মুচকি হাসতে হাসতে ওয়াসরুমে গেলো। এখনো ফ্রেশ হয়নি সে।
আয়নায় নিজের মুখটা দেখতেই কানে বাজলো তাঁর মেঘবতীর বলা কথাটা,”আপনি মোটেও খারাপ নয় আমি জানি।” আচ্ছা সুপ্তির গলা এতো মিষ্টি কেন? আরার তাকে ভালোবাসে বলে কি এতো মিষ্টি তাঁর গলা? মুখে পানির ছিঁটা দিয়ে আয়নায় তাকালো আরান। ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে। এ কোন সর্বনাশ হলো তাঁর? একা একা হাসে কেন সে?
_______________________
ফারদিন আর সুলভ একই বিভাগের ছেলে। তাই ভার্সিটির ছুটিতে তাঁদের একসাথেই যাওয়া আসা হয়। এবারও ব্যতিক্রম নেই। দুই বন্ধু এক সাথে মিলে আপন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিবে। দৌড়ে দু বন্ধু এসে ট্রেনে উঠলো। তাঁদের সিট পড়েছে ৬নং কেবিনে। নিজেদের কেবিনে ঢুকে দেখলো এক বৃদ্ধা মহিলা ও একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা জানালার দিকে মুখ করে আছে তাই মুখটা দেখা যাচ্ছে না।
দুই বন্ধু ব্যাগপত্র রেখে বসা মাত্রই চোখে পড়লো চশমা চোখে হলুদ ড্রেস পড়া সুপ্তির উপর। এতোক্ষণ জানালার বাইরে সে-ই তাকিয়ে ছিলো । সুলভ আর ফারদিন অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। ফারদিন চট করে উঠে গিয়ে সুপ্তি ও বৃদ্ধা মহিলার মাঝখানে বসলো। মহিলাটি ফারদিনের দিকে আগুন চোখে তাকালেন। এভাবে আচমকা কেউ বসায় সুপ্তিও কেঁপে উঠলো। পাশ ফিরে ফারদিনকে দেখে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে বলল,”
_আরে আপনি?
_হ্যাঁ আপনিও যে?
_আমি তো রাজশাহী যাবো।
_সত্যি? আমরাও রাজশাহী যাচ্ছি।” সুপ্তি সামনের সিটে তাকিয়ে দেখলো সুলভ বসে আছে। অন্য সময় হলে এদের সাথে কথাই বলতো না। কিন্তু এখন তর্নি ও আরারের মাঝে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সেই সুবাদে তো কথা বলতেই হবে। যতই হোক তাঁদের দুলাভাইয়ের বন্ধু বলে কথা। সুপ্তি সুলভকে বলল,
_আরে সুবল ভাই ভালো আছেন?
সুলভ চট করে সোজা হয়ে বসে মাথার চুল ও কলার ঠিক করতে করতে বলল,
_হ্যাঁ ভালো। তবে সুবল না সুলভ।
_অহ সরি সঠিক জানিনা। এখন জেনে যাবো। আপনারা এখন আমাদের মেহমান হয়ে যাবেন।
“ফারদিন বলল,”
_হ্যাঁ ঠিকি বলেছেন ভাবি।”
ভাবি ডাক শুনে সুপ্তির মুখের হাসি উদাও হয়ে গেলো। আঁড়চোখে একবার সুলভের দিকে তাকালো। ফারদিন ভাবি বলল কেন? এই ছেলেটা তাকে ভালোবাসে নাকি? সুপ্তি কড়া চোখে ফারদিনের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ ধারালো গলায় বলল,
_মুখ সামলে কথা বলবেন,ফাজলামি আমার একদম পছন্দ না।
_ফাজলামি কই করলাম ভাবি? আপনি আমার বন্ধুর বউ হলে তো আপনি ভাবি লাগেন তাইনা?
সুপ্তি আবার তাকালো সুলভের দিকে। সুলভ তাঁদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। সুপ্তি এবার কড়া করে বলল,
_আর একবার ভাবি বলে ডাকবেন তো এক্ষুনি আপনার বন্ধু আরার কে ফোন লাগিয়ে নালিশ করবো। তখন দেখবেন সে আপনাদের কি হাল করে।
ফারদিন তাঁর বত্রিশপাটি দাঁত বের করে হেসে বলল,
_কিছুই করবে না। সে জানে বন্ধুর বউদের সবাই ভাবি ডাকে।
সুপ্তির রাগ এবার সপ্তম আকাশে চড়ে গেলো। অগ্নি তীক্ষ্ণ দুটো চোখ দিয়ে সুলভের দিকে তাকালো। ফারদিনকে দিয়ে ভাবি ডাকিয়ে সে বসে বসে মজা নিচ্ছে? দাঁতে দাঁত চেপে ফারদিনকে বলল,
_উঠেন।
ফারদিন না শুনার ভান করে সুপ্তির দিকে কান বাড়িয়ে বলল,”
_জ্বি বুঝিনি।
সুপ্তির ইচ্ছে করলো ফারদিনকে লাত্তি দিয়ে সিট থেকে তুলে দিতে৷ কিন্তু তর্নির মাত্র প্রেমটা শুরু হয়েছে। এখন যদি আরারের বন্ধুদের সাথে তাঁরা খারাপ বিহেভ করে তাহলে তো ওরা যেভাবেই হোক তর্নির উপর সে শোধ নিবে। বেচারি সাদামাটা তর্নিটা শুধু শুধু কষ্ট পাবে। তার থেকে ভালো সুপ্তি রাগ কন্ট্রোল করুক। সুপ্তি নিজেকে শান্ত করে জোরপূর্বক হেসে বলল,
_আপনার সিটে যান ভাইয়া।
ফারদিন উঠে নিজের সিটে চলে গেলো। বৃদ্ধা মহিলাটি কেমন তীক্ষ্ণ চোখে তাঁদের দেখে যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে উনি মনে মনে সুপ্তি ফারদিন ও সুলভকে চোদ্দগুষ্টি তুলে গালি দিচ্ছেন। সুপ্তির অগ্নি চোখ দুটো আবারও সুলভকে খুন করে যাচ্ছে। সুলভ ফারদিনকে চাপা গলায় বলল,
_এই ফারদিন, ভাবি এভাবে আমার দিকে তাকায় কেন?” ফারদিন তাকিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি সুপ্তি রাক্ষসী রূপে তাকিয়ে আছে। ফারদিন বলল,”তুই জুহাকে পছন্দ করিস, সেটা মনে হয় আরার বলে দিছে।
_তাই বলে এভাবে তাকাবে ভাই? দেখ চোখ দুটো কেমন ডাইনির মতো লাগছে। যেন চশমা না থাকলে চোখ দুটো বেরিয়ে যেতো।
ওদের ফিসফিসানি দেখে সুপ্তি ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
_ওই কি কানাকানি করেন?
ফারদিন আগের ন্যায় কান বারিয়ে বলল,
_কি বুঝিনি।
সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ”
_আমার মনে হয় ভাইয়া আপনি কানে একটু কম শুনেন। বাসায় গিয়ে না আগে কানের ডাক্তার দেখাবেন।
ফারদিন আগের মতোই বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেসে বলল,
_আমাদের এলাকায় না কানের ডাক্তার পাওয়া যায়না। এই সুলভ তোদের এলাকায় পাওয়া যায়?” সুলভ না সূচক মাথা নাড়ায়। ফারদিন বলে,”
_ভাবি আপনাদের এলাকায় পাওয়া যায়?” সুপ্তি আবার রাগান্বিত চোখে তাকায়। ফারদিনের চোখে চোখ পড়তেই হেসে বলে,”
_না দুর্দিন ভাইয়া পাওয়া যায়না।”
_আমার নাম ফারদিন, দুর্দিন না।
_আমি দুর্দিন বলিনি দূর্দিন বলেছি। দ ঊ কারে দূ র দূর। দূর্দিন।
ফারদিনের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সুলভ ফারদিনের একটা হাতে ধরে শান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিলো৷ ফারদিন মুখে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা টেনে বলল,
_বুঝতে পেরেছি মিস করল্লা।
_কিহ? আমি,,,,আমি করল্লা?
সুলভ ফারদিনকে বলল,
_ভাই করল্লা না অনেক তিতা। পেয়াজ বল পেয়াজের অনেক দাম।
সুপ্তি ব্যাগের উপর থাকা চকলেটটা সুলভের উপর ছুঁড়ে মেরে বলল,
_আপনার চৌদ্দগুস্টি পেয়াজ। নিজেদের নাম তো একেকটা ডাসবিন থেকে তুলে এনে রাখা হয়েছে। কারো নাম আরার কারো নাম দুর্দিন কারো নাম আবার সুলভ। সুলভ মানে কি জানেন? মূল্যহীন,তুচ্ছ। একজন তো পুরো দেশের নাম রেখে ফেলছে। আহা, ইরান। এর থেকে তো উগান্ডা নামটা ভালোই মানাতো। আপনাদের মতো ছেলেদের এসব ট্রেনে উঠতে দেয় কে বলেন তো? যত্তসব আজাইরা।”
ফারদিন এতোক্ষণ নিজেকে শান্ত করে রেখেছে আর পারলো না। সিট থেকে উঠে তেড়ে আসতে চায়। সুলভ কোমর জড়িয়ে ধরে আটকায়। ফারদিন রাগান্বিত গলায় বলে,”
_ওই কাকে আজাইরা ডাকলেন? আমরা আজাইরা?
সুপ্তি শীতল গলায় জবাব দেয়,”
_না মিস্টার দুর্দিন। আপনারা আজাইরা হবেন কেন? আপনারা নাম্বার ওয়ান খচ্চর।
_কিহ আমরা খচ্চর? আর দুর্দিন কে হ্যাঁ? নাম উচ্চারণ করতে পারেন না তো নাম ধরে ডাকেন কেন?
_রেগে যাচ্ছেন কেন, ভুল কি বললাম? আপনার নাম কি? fardin,, far মানে দূর। সেই হিসাবে আপনি হলেন দূর্দিন।
ফারদিন রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
_আপনাকে যে কোন এঙ্গেল থেকে আমার বন্ধু পছন্দ করে সেটা আমি বুঝে উঠতে পারিনা। দেখেই না একদম ডাইনিদের মতো লাগে। চশমা ছাড়া চলতে পারে না কানা কোথাকার।
_আর আপনি কি হ্যাঁ? নাক মোটা বাদর কোথাকার।
_আমার নাক মোটা?
_শুধু নাক না আপনার মাথাটাও মোটা।
সুলভ ফারদিনকে চাপা গলায় বলল,
_আহ ফারদিন কি করছিস? আরার জানলে কিন্তু সমস্যা হবে।”
ফারদিন ঝাড়া দিয়ে সুলভের হাত ছাড়িয়ে বলল,
_হোক সমস্যা। এতো ভয় পাইনা আমি।” বলতে বলতে সুপ্তির ছুঁড়ে ফেলা চকলেটের উপর বসে পড়লো ফারদিন। এটা দেখেই সুপ্তি তৎক্ষণাৎ উঠে এসে টান দিয়ে ফারদিনকে বসা থেকে তুললো। ফারদিন রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”হোয়াট দ্যা হেল।” সুপ্তি চকলেট হাতে নিয়ে আবার জায়গা মতো বসে গেলো। সুপ্তির এমন কান্ডে বৃদ্ধা মহিলা থেকে শুরু করে তাঁরা দুই বন্ধু অবাক হয়ে গেলো।
ফারদিন মিনমিন করে সুপ্তিকে বকা দিতে দিতে গিয়ে সিটে বসলো। সুপ্তি কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো। এই ফারদিনের মতো মাথা মোটার সাথে ঝগড়া করার থেকে গান শুনাই ভালো।
_____________________
ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আরার। আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে সে। চাঁদে যেন সুপ্তির মুখটা ভেসে উঠছে বার বার। মনের গভীরে এক সুখের দোলা লাগছে। অজানা সুখ। এই সুখটা চিনেনা আরার। আজ ভালোবাসার শুরু হয়েছে তাঁর। এই নিয়ে চারবার তাঁর মেঘবতীর সাথে কথা হয়েছে। তবুও মনে হচ্ছে পিপাসা মিটেনি৷ সুপ্তি বলেছে সে তাঁর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। আর কাল কথা হবে তাঁদের মাঝে।
ট্রেনে থেকে কথা বলতে পারবে না বলে জানিয়েছে তাঁর মেঘবতী। আরারের ইচ্ছে করছে আবার তাঁর মেঘবতীর সেই নেশাভরা কণ্ঠটা শুনতে। একবার দেখার প্রবল ইচ্ছে মনের ঘরটা বার বার কাঁপিয়ে তুলছে। কিন্তু আফসোস। সুপ্তির অ্যান্ড্রয়েড ফোন নাই। নয়তো বলতো একটাবার ভিডিও কল দিতে। তাঁর মধুর কণ্ঠের একটা ভয়েস দিতে। আরান ফোন বের করে মেঘবতী নামে সেভ করা নাম্বারে মেসেজ দিলো,
_”মেঘবতী তুমি কিন্তু আমার তখনের মেসেজের রিপ্লাই দাওনি। আমি অপেক্ষায় আছি।”
মেসেজটা সেন্ড করে পাঁচমিনিট ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে নিচে গেলো আরার৷ তাঁর বোনরা বসার রুমে বসে টিভি দেখছে। আরার নিচে যেতে পা বাড়াতেই ভাইব্রেশনে ফোনটা কেঁপে উঠলো। মেঘবতী মেসেজ দিয়েছে। আরারের মলিন মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ঠোঁট কামড়ে হেসে হেসে রুমে চলে গেলো। তাঁর এইভাবে রুমে যাওয়াটা চোখ আওড়ালো না তাঁর বোনদের। আরার ঘরে এসে মেসেজটা সিন করলো।
_”আমার নির্লজ্জ চুলগুলো আপনার হাতের ছোঁয়া পেতে বড্ড ছটফট করছে। ওরা আপনার হাতের ছোঁয়া পেয়ে লজ্জাবতী হয়ে নুয়ে পড়তে চায়৷ আপনার ঘোর লাগা গলার দু একটা লাগামহীন কথা শুনতে চাচ্ছে ওরাও। আপনি আসেন না একবার বাতাস হয়ে আমায় ছুঁয়ে দিতে। যেন সবার সামনে ছুঁয়ে দিলেও কেউ দেখেনা আপনায়।
আমি চোখ বন্ধ করে আপনায় অনুভব করতে চাই। আমার সাথে সাথে আমার নির্লজ্জ বেহায়া চুলেও আপনায় লেপ্টে রাখতে চাই। নির্লজ্জ চুলের বাঁধনে আপনাকে বেঁধে রাখতে চাই। আপনার হাতের ছোঁয়ায় আমার খোপা বাঁধতে চাই। সেই খোপার মাঝে একটা বেলি ফুলের মালা চাই৷ আমার এতো চাওয়ার পরেও শুধু আপনাকে চাই।
চলবে,,,,,,,।